পরাগরেণু (Pollen Grain)

                       -:পরাগরেণু (Pollen Grain):-
  
আমরা কম বেশি প্রায় সকলেই পরাগরেণু বা রেনু(Pollen) শব্দটির সাথে পরিচিত। যদিও যতদূর আমরা জানি এটি একটি ক্ষুদ্র পাউডারের ন্যায় বস্তু যা ফুলে হাত দিলে অনেকসময় হাতে লেগে যায়,এবং অনেকসময় এলার্জি (হাঁচি) র উদ্রেক করে। কিন্তু জীববিজ্ঞান এর দিক দিয়ে দেখতে গেলে রেনু নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়া হয়েছে,এবং আপনাদের জানিয়ে রাখি এটি না হলে হয়তো গরম কালে আম বা শীতে কমলালেবু র স্বাদ ই হয়তো পেতাম না আমরা।অবাক লাগল নিশ্চই??হয়ত ভাবছেন পাগলের মতো কি সব বকে মরছি....তাহলে চলুন একটু বুঝিয়ে বলা যাক-------
   

-: পরাগরেণুর উৎপত্তি (Origin of Pollen Grain) :-

পরাগরেণু যার জীববিজ্ঞান এর ভাষায় নাম মাইক্রোস্পোর (Microspore) যা পুং গ্যামেট গঠন করে। মাইক্রোস্পোর এর বাইরের আঘাত থেকে বাঁচার জন্য এর ওপর একটি অভিযোজিত গঠন সৃষ্টি হয়েছে যার নাম স্পোরোপোলেনিন (Sporopollenin) । পরাগরেণু র গঠন ও পুষ্টিস্থল হল পরাগধানী। পরাগধানী পরাগরেণু র পুষ্টি সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত পরাগ ধারণ করে এবং পরে পরাগধানী র পর্দা বিদীর্ণ হয়ে পরাগরেণু বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। যে পদ্ধতিতে পরাগরেণু গঠন হয় তাকে বলে মাইক্রোস্পোরোজেনেসিস (Microsporogenesis)।  এই পদ্ধতিতে মিয়োসিস বিভাজনের মাদ্ধমে স্পোরোজেনাস কোষ (sporogenous cell) থেকে দ্বিকোশীয়  মাইক্রোস্পোর গঠন হয়। 
          ●জবা ফুল (Hibiscus rosa-sinensis) এর  কাজুবাদামের মতো  পরাগধানী 

               ●পরাগসংযোগ (Pollination):-

পরাগধানী বিদীর্ণ হবার পর পরাগরেণু পরিবেশে মুক্ত হয় এবং ফুলের রঙিন দলমণ্ডল(Corolla) এর জন্য পাখি বা কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট হবার দরুন কীট পতঙ্গ সেই ফুলে এসে বসে এবং পরাগরেণু পতঙ্গের দেহের সাথে লেগে যায়। এবং ওই প্রাণী অন্য ফুলে বসলে পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হয়ে ফুলের গর্ভাশয় কে নিষিক্ত (Fertilization) করে। সুতরাং বলা যায় যে
  যে বিশেষ প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিম পদ্ধতিতে সমগোত্রীয় ফুলের পরাগরেণু  এক অথবা ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হয়ে পরাগসংযোগ করে ফুলের গর্ভাশয়(ovary) কে নিষিক্ত করে  এবং ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টি করে ,সেই পদ্ধতিকে বলে ইতর পরাগসংযোগ। 
আবার ,যে বিশেষ প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিম পদ্ধতিতে সমগোত্রীয় একই উদ্ভিদের একই ফুলের গর্ভমুন্ডেসেই ফুলের পরাগরেণু পরে সেই ফুল এর গর্ভাশয় কে নিষিক্ত করে সেই পদ্ধতিকে বলে  স্বপরাগসংযোগ।

পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম (Pollen Germination):-
.       
               ●পরাগরেণুর অঙ্কুরোদগম এর চিহ্নিত চিত্র

পরাগরেণু ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হবার পর উপযুক্ত পরিবেশে অঙ্কুরোদগম করে। 
1.প্রথম পর্বে পরাগরেণুর নিউক্লিয়াস (Megaspore Nucleus) টি   বিভাজিত হয়ে দুটি নিউক্লিয়াস গঠন করে যার নাম অঙ্গজ কোষ ও জেনারেটিভ কোষ ।
2.জেনারেটিভ কোষ বিভাজিত হয়ে গঠন করে পুং গ্যামেট।(n)
3.পুং গ্যামেট গঠনের পর পরাগরেণুর একটি অংশ আকারে বর্ধিত হয় এবং ক্রমান্বয়ে পোলেন টিউব(Pollen tube) গঠন করে ।
4. পরবর্তীতে দুটি পুং গ্যামেট পোলেন টিউব এ প্রবেশ করে এবং পোলেন টিউব বর্ধিত হতে থাকলে দুটি পুং গ্যামেট এর একটি বিনষ্ট হয় এবং অন্যটি ফুলের গর্ভদণ্ডের কোষ ভেদ করে নিচের দিকে এগোতে থাকে ও গর্ভাশয়ের ডিম্বক রন্ধ্র দ্বারা প্রবেশ করে এবং ডিম্বক কে নিষিক্ত করে কোষ বিভাজিত হয়ে সস্য (3n) গঠন করে ক্রমান্বয়ে ফল গঠন করে।

             
                     -:ডিম্বাশয়ের চিহ্নিত চিত্র:-
     
           -------------///////////------------- 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মেগাস্পোরোজেনেসিস এবং মেগাগ্যামেটোজেনেসিস (Megasporogenesis and Megagametogenesis)